Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

তাল চাষ সম্প্রসারণ

তাল বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অপ্রচলিত ফল। একক লম্বা কাণ্ড ও তার আগায় সুন্দরভাবে এক গুচ্ছ পাতার সমারোহে সুশোভিত তাল গাছ দেখতে অপূর্ব লাগে। নারিকেল, খেজুর, সুপারির মতো তাল একই ‘পামী’ পরিবারভুক্ত। এ উদ্ভিদ এক দল বীজ পত্র দলীয় এবং এ গাছের শিকড় গুচ্ছ মূল বিশিষ্ট। তাল গাছের শিকড় মাটির বেশি গভীরে পৌঁছে না তবে শতাধিক গুচ্ছ মূল চারদিকে সমানভাবে ছড়িয়ে মাটিকে শক্ত করে ধরে রাখে। প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা (ঝড়, সাইক্লোন) থেকে গাছকে রক্ষা ও ভূমির ক্ষয় রোধ করে। বয়স্ক গাছ ৬০-৮০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। গাছের আগায় ৩৫-৫০টা শক্ত পাতা থাকে। পাতার আগা সূচালো হওয়ায় বজ্রপাত রোধক গাছ হিসেবে এ ফলের আবাদ অতি জনপ্রিয়। একই কারণে বজ্রপাতের কবল থেকে প্রাণিকুলকে রক্ষা করার জন্য ও গাছের বহুবিধ ব্যবহার সুবিধাকে কাজে লাগানোর লক্ষ্যে তাল ফল সম্প্রসারণে অনেক দেশেই প্রাধান্য দেয়া হয়। একই গুরুত্বে বাংলাদেশ সরকার চলতি বছরে (২০১৬-২০১৭) ১০ লাখ তাল চারা রোপণ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। চলতি ২০১৭ সালে ডিএই ২ লাখ তাল বীজ/চারা সারা দেশে রোপণ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
 

পুষ্টিগুণ : তাল অতি পুষ্টিকর ও ঔষধিগুণ সমৃদ্ধ। সব ধরনের ফলে দেহের জন্য উপযোগী বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন ও মিনারেলস সমৃদ্ধ হলেও তালে এর বহির্ভূত কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদন রয়েছে। অন্য ফলের তুলনায় এ ফলে ক্যালসিয়াম, লৌহ, আঁশ ও  ক্যালোরির উপস্থিতি অনেক বেশি। বয়স্কদের জন্য এ ফলের উৎস থেকে সহজেই হজমযোগ্য পর্যাপ্ত আঁশ প্রাপ্তিতে অতি গুরুত্ব বহন করে। আখের গুড়ের চেয়ে তালের গুড়ে প্রোটিন, ফ্যাট ও মিনারেলসের উপস্থিতি বেশি।
 

ঔষধিগুণ :  তালের রস আমাশয় নিরাময়, মূত্রের প্রবাহ বৃদ্ধিকারক এবং পেটের পীড়া/প্রদাহ, কোষ্ঠকাঠিন্য নিরসনে সহায়ক। এ ফলের রস সেবনে শরীরকে ঠাণ্ডা রাখে, ক্লান্তি দূর করে, দেহে শক্তি জোগায় এবং অনিদ্রা দূর করে। তালের রস থেকে তৈরি  মিসরি সর্দি-কাশি নিবারণে বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য মহৌষধ হিসেবে কাজ করে। এছাড়া যকৃতের পীড়া ও পিত্তনাশক হিসেবে এ ফল অতি কার্যকর।  
 

উপকারিতা : কাঁচা-পাকা  তাল ও গাছের প্রতিটা অঙ্গ জনজীবনে অতি গুরুত্ব বহন করে। বয়স্ক গাছের (৫০ বছর ও তার ঊর্ধ্ব) কাণ্ডের টিম্বারভ্যালু খুব বেশি। গ্রাম-গঞ্জে টিনের বা সেমিপাকা বাড়ি তৈরিতে এ গাছের শক্ত দীর্ঘস্থায়ী কাঠের ব্যবহার জনপ্রিয়তা খুব বেশি। কাঁচাঘর তৈরিতে খড়ের বিকল্প হিসেবে দরিদ্র পরিবারবর্গ তালের পাতাকে অন্যতম উপাদান হিসেবে ব্যবহার করে থাকে।
 

বর্ষায় প্লাবণে তালের কাণ্ড দিয়ে ডিঙি বানিয়ে অনেকে পানি পথ পারাপার হয়। জ্বালানি হিসেবেও তালের পাতা ও ডগা ব্যবহার করার প্রচলন গ্রামগঞ্জে বেশি। প্রাচীন কালে যখন কাগজের ব্যবহার প্রচলন ছিল না তখন লেখাপড়ার কাজে কাগজের বিকল্প হিসেবে তাল পাতা ব্যবহার করা হত। তাল পাতা দিয়ে নানা প্রকার হাত পাখা তৈরি করা হয়। গরমকালে এ পাখার ব্যবহার খুব বেশি। তাল পাতা দিয়ে রঙবেরঙের পাখা তৈরি ও বিপণনের মাধ্যমে বাড়তি উপার্জনের কাজে মূলত মহিলারা নিয়োজিত থাকে।   
তালের ফুল ও কচি ফল থেকে সংগৃহীত রস অন্যতম সুস্বাদু মূল্যবান পানীয় হিসেবে ব্যবহার অতি জনপ্রিয়। তালের রস থেকে গুড় তৈরি করা হয়। এ গুড়ের বাজার মূল্য অনেক বেশি। পুরুষ-স্ত্রী উভয় প্রকার গাছ থেকেই তালের রস পাওয়া যায়। মৌসুমে একটা তাল গাছ থেকে দৈনিক ১০-১৫ লিটার রস পাওয়া যায়।

 

কচি তালের ভেতরের আহার্য্য অংশ অতি সুস্বাদু ও জনপ্রিয়। কচি ফলের বাজার মূল্যও অনেক বেশি। এপ্রিল-মে মাসের গরমে তৃষ্ণা নিবারণে ও বিচিত্র স্বাদ আহরণে কচি তালের কদর বেশি। কচি তাল সংগ্রহ ও তা বিপণন কাজে হাজার হাজার মানুষ মৌসুমে নিয়োজিত হয়ে থাকে। পাকা তালের ঘন রস বিভিন্ন উপাদেয় সুস্বাদু খাবার তৈরির কাজে ব্যবহার হয়। তালের রস দিয়ে তৈরি হরেক রকমের পিঠা, পায়েশ, হালুয়ার স্বাদই আলাদা। তালের আঁটিকে ছাই মিশ্রিত মাটির নিচে ৫-৭ সপ্তাহ সংরক্ষণ করা হলে তা থেকে লম্বা মোটা শিকড় গজায়। এ অবস্থায় আঁটির ভেতরে নরম শাঁস তৈরি হয়। শিশু, কিশোর ও বয়স্ক সবার কাছে এ সুস্বাদু আঁশ অতি জনপ্রিয়।
 

বৃহত্তর ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও রাজশাহী জেলায় এ ফলের চাষ তুলনায় অনেক বেশি। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে বাংলাদেশে অসময়ে প্রচুর বৃষ্টি ও বজ্রপাতের প্রতিকূল প্রভাব অহরহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কয়েক বছর ধরে বজ্রপাতের আধিক্য অনেক বেড়ে গেছে। বিশেষ করে হাওর এলাকায় তালসহ অন্য বয়স্ক বড় গাছের (বট, পেকুড়, তেঁতুল) অনুপস্থিতির কারণে তদাঞ্চলে বজ্রপাতে মৃত্যুর হার তুলনায় অনেক বেশি। এ অবস্থার উন্নয়নে সারা দেশে তাল গাছ সম্প্রসারণে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া সবার কর্তব্য।
 

মাটি :  তাল সব ধরনের মাটিতে চাষ সুবিধা আছে। প্রতিকূল পরিবেশে কিছুটা অনুর্বর মাটিতেও তাল চাষ করা যায়। অন্যগাছের তুলনায় জলাবদ্ধতা ও লবণাক্ত সহিষ্ণুগুণ ফলের বেশি।
জাত : দেশ-বিদেশে তালের কোনো সুনির্দিষ্ট জাত কম দেখা যায়। তাল ফলের আকার, রঙ ও ফল ধরার অবস্থা বিবেচনায় স্থানীয়ভাবে জাতের বিভিন্ন নামকরণ হয়। পাকা তালের রঙ হালকা বাদামি, গাঢ় হলুদ এবং কালো হতে পারে। এছাড়া কিছু বারোমাসি জাতের তাল গাছ দেখা যায়। যেহেতু খেজুর, লটকনের মতো তাল গাছের পুরুষ ও স্ত্রী গাছ আলাদাভাবে জন্মে। এজন্য টিস্যু কালচার বা অনুরূপ ব্যবস্থায় বংশবিস্তার ব্যবস্থা ছাড়া বীজ থেকে প্রাপ্ত চারায়  জাতের বৈশিষ্ট্যতা বজায় রাখা সম্ভব হয় না।

 

বংশবিস্তার :  তালের বীজ থেকে চারা তৈরি করে অথবা সরাসরি বীজ মাটিতে বপন করে তালের বংশবিস্তার করা হয়। অন্য ফলের মতো বাগান আকারে তালের চাষ প্রচলন এদেশে নেই। আগস্ট-অক্টোবর মাসে পাকা তাল প্রাপ্তির ভরা মৌসুম। পাকা তাল বা বীজ কোনোভাবে জমিতে, রাস্তা, পুকুর বা দিঘির পাড়ে পড়ে থাকলে তা থেকেই নতুন গাছের সৃষ্টি হয়। যেহেতু বীজ গজিয়ে চারা  তৈরি করে তা থেকে ফল পেতে ১০-১২ বছর সময় লেগে যায়, এজন্য অন্য ফলের মতো বসতবাড়িতে বা বাগান আকারে তাল গাছ রোপণে কারো আগ্রহ দেখা যায় না। তবে রাস্তা, বাঁধের ধার, চিংড়ির ঘের, রেললাইনের পাশে ও অন্য কমিউনিটি স্থানে বৃক্ষ রোপণে বিশেষ লাভবান হওয়া যায়।
 

চারা তৈরি :  চারা তৈরির জন্য প্রথমে ভালো উন্নত মানের বেশি ফলদানে সক্ষম এমন মাতৃগাছ নির্বাচন করে তা থেকে বীজ সংগ্রহ করা উচিত। পাকা ফল সংগ্রহের দুই সপ্তাহের মধ্যে রোপণ করা উচিত। অন্যথায় বীজ শুকিয়ে গেলে তা থেকে চারা গজায় না।  অসময়ে তাল প্রাপ্তির প্রয়োজনে বারোমাসি জাতের গাছ থেকে তাল বীজ সংগ্রহ করা উত্তম। আগস্ট মাস থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত তাল পাকে। এ সময় তাল বীজ বেশি সংগ্রহ সুবিধা রয়েছে। তবে বারোমাসি জাতের তালের বীজ এপ্রিল-মে মাসের মধ্যে সংগ্রহ করে সরাসরি বীজ রোপণ অথবা জুলাই-আগস্ট মাসের মধ্যে তৈরি চারা রোপণ করা বেশি উপযোগী। বিশেষ করে হাওর অঞ্চলে চারা রোপণের ক্ষেত্রে আগাম চারা তৈরি করে নিয়ে হাওরের কিনারের অপেক্ষাকৃত উঁচু জমি  থেকে পানি নেমে গেলে সেসব স্থানে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে চারা রোপণ কাজ শেষ করা উত্তম ।
 

প্রায় ১০ ফুট লম্বা এবং ৩ ফুট চওড়া বীজতলায় এক হাজার তালের আঁটি বা বীজ বসানো যায়। বীজ থেকে চারা গজানোর সময় শিকড় দ্রুত মাটির নিচে প্রবেশ করে এবং তা উঠিয়ে পলিব্যাগে সংরক্ষণ করা কষ্টকর হয়। এ অবস্থায় মাটি থেকে চারা উঠালে অধিকাংশ চারা মারা যেতে পারে। এজন্য বীজ তলার নিচের অংশে পাতলা টিনের শিট বা পুরু পলিথিন বিছিয়ে অথবা তলার এ অংশ ২-৩ ইঞ্চি পুরু করে সিমেন্ট বালি খোয়া দিয়ে ঢালাই করে নিয়ে তা তালের চারা তৈরির কাজে ব্যবহার করলে সুবিধা হয়, তাতে শিকড় মাটির ভেতরে প্রবেশ বাধাগ্রস্ত হয়। এতে গজানো আঁটি সহজেই উঠিয়ে পলিব্যাগে সংরক্ষণ উপযোগী হয়। বীজতলা তৈরিকালে নিচের অংশ কম্পোস্ট/পচা গোবর ও ছাই মিশ্রিত বেলে-দো-আঁশ মাটি দিয়ে  ৩ ইঞ্চি পরিমাণ ভরাট করে তাতে সারি করে বীজ বসাতে হয়। বীজগুলো বসানো হলে মোটা বালু  ও মাটির মিশ্রণ দিয়ে প্রায় ১ ইঞ্চি (২-৩ সেমি) পুরু করে বসানো বীজের উপরিভাগ ঢেকে দিতে হয়। বীজতলার মাটিতে নিয়মিত হালকা পানি সেচ দিয়ে ভেজাতে হয়। বীজ বপনের ৩-৪ সপ্তাহের মধ্যে বীজ অঙ্কুরিত হওয়া শুরু হবে। গজানো বীজ থেকে মোটা শিকড়ের মতো নরম, আগা কিছুটা সূচালো এক প্রকার টিউব তৈরি হয়। এ টিউবের মধ্যে শিকড় ও সুপ্ত পাতা একই সঙ্গে বড় হয়ে ৮-১০ সপ্তাহের মধ্যে গজানো পাতা প্রায় ৭-১৫ ইঞ্চি লম্বা হয়। পাতা বের হওয়া শুরু হলে টিউবের আবরণ শুকিয়ে বা পচে ভেতরের পাতা ও শিকড় আলাদাভাবে বড় হওয়া শুরু করে। এ সময় চারাগুলো আঁটিসহ উঠিয়ে পুরু শক্ত ১০দ্ধ১০ ইঞ্চি মাপের পলিব্যাগে অথবা পরিত্যক্ত সিমেন্টের বস্তা দিয়ে তৈরি ব্যাগে ভালো মানের পটিং মিডিয়া (বেলে দো-আঁশ মাটি ৫০%, জৈব পদার্থ ৪০% এবং ১০% কেকোডাস্ট/করাত কলের গুঁড়া) ব্যবহার করে তা সংরক্ষণ ব্যবস্থা নেয়া হয়। অনেক সময় তৈরি নতুন চারার শিকড় বেশি বড় হয়, এ ক্ষেত্রে ব্যাগিং করার সময় কাজের সুবিধার্থে গাজানো শিকড় ৪-৬ ইঞ্চি রেখে অবশিষ্ট অংশ সিকেচার বা ধারালো চাকু দিয়ে কেটে ফেলা উত্তম হবে। চারা ব্যাগিং করার প্রথম ২-৩ সপ্তাহ হালকা ছায়া দেয়ার ব্যবস্থা করা ভালো।  
 

বীজ/চারা রোপণ :  রাস্তা, বাঁধ ও রেললাইনের ধারে, চিংড়ির ঘেরে, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, গোরস্থান, শ্মশান, ঈদগাহ বিভিন্ন ধরনের ‘কমিউনিটি’ প্লেসে তাল ফল সম্প্রসারণ সুবিধা এ দেশে বেশি। চারা তৈরি, সংরক্ষণ, পরিবহন ও তা রোপণ কাজ অনেক ঝামেলা/ কষ্টকর ও ব্যয় বহুল। এজন্য বেশি পরিমাণে তাল সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে সরাসরি জমিতে বীজ রোপণ করা  সহজতর। বিদ্যুৎ লাইনের অবস্থান বিবেচনায় এনে তাল বীজ/চারা রোপণ ব্যবস্থা নিতে হয়।  
 

দু’এক সারি তাল বীজ/চারা রোপণের জন্য ১০-১২ ফুট দূরত্ব দিলেই চলে। প্রতিটা গাছের দূরত্ব নির্ধারণ করে নিয়ে ২ী২ী২ ফুট মাপের গর্ত তৈরি করে সার মাটি দিয়ে পুনরায় তা ভরাট করে বীজ/চারা রোপণ করা উচিত হবে।  রোপণের আগে প্রতিটা গর্তে ১০-১৫ কেজি গোবর এবং ২৫০ গ্রাম করে টিএসপি ও এমওপি  সার মিলে মোট ৫০০ গ্রাম গর্তের মাটির সাথে ভালোভাবে মেশানো প্রয়োজন। গোবর সার প্রাপ্তি সুবিধা না থাকলে নিকটস্থ জমির উপরিভাগের (ঞড়ঢ় ংড়রষ) উর্বর মাটি দিয়ে গর্ত ভরাট করলেও রোপিত বীজ/চারা বাড়তে সহায়ক হবে।  
 

সার প্রয়োগ :  তাল গাছে সার প্রয়োগ করার প্রচলন এদেশে নেই। তবে রোপিত গাছে প্রথম বছর পচা গোবর-১০ কেজি, ইউরিয়া-৩০০ গ্রাম, টিএসপি-২৫০ গ্রাম এবং এমওপি-২০০ গ্রাম হারে সার প্রয়োগ করা হলে গাছ ভালোভাবে বাড়বে, ফলন বেশি দিবে। এ সারের অর্ধেক পরিমাণ বর্ষার আগে এবং বাকি অর্ধেক সার বর্ষা শেষে বছরে দুইবার প্রয়োগ করা প্রয়োজন। তাল গাছের বয়স বাড়ার সাথে সাথে প্রতি বছর ১০% হারে সারের পরিমাণ বাড়াতে হবে এবং  এ প্রবৃদ্ধি ৭-৮ বছর পর্যন্ত অব্যাহত রাখতে হবে। এরপর প্রতিটা বয়স্ক গাছের জন্য পচা গোবর-২০ কেজি, ইউরিয়া-১ কেজি, টিএসপি-৯০০ গ্রাম এবং এমওপি-৮০০ গ্রাম হারে প্রয়োগ করার প্রয়োজন হবে।
 

পরিচর্যা :  তাল বীজ/চারা রোপণের পর খুব একটা যত্ন নেয়া হয় না। তবে দু’এক মাসের ব্যবধানে গাছের গোড়া আগাছামুক্ত রাখার প্রয়োজন হয়। খরা মৌসুমে গাছের গোড়ায় ১.৫-২ ইঞ্চি দূর পর্যন্ত স্থানের মাটি আগলা করে দিয়ে কচুরি পানা/খড়কুটা অথবা স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য অনুরূপ দ্রবাদি দিয়ে ঢেকে মালচিং ব্যবস্থা নেয়া ভালো। পরবর্তীতে এ মালচিং দ্রবাদি পচে জৈব সার হিসেবে গাছের  উপকারে আসবে। তাতে  মাটিতে রস সংরক্ষিত থাকবে, আগাছা সহজেই দমন হবে। খরা মৌসুমে পানি সেচ এবং বর্ষাকালে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা করতে হবে।
 

পোকামাকড়  ও রোগবালাই :  অন্য ফল গাছের তুলনায় তাল গাছে পোকামাকড়ের উপদ্রব কম। এছাড়া অতি লম্বা গাছের আগায় পাতা, ফুল ও ফলে ছত্রাক/কীটনাশক ব্যবহার করা ততটা সহজ নয়। তথাপি রোগবালাই  ও পোকামাকড়ের উপদ্রব দেখা দিলে তা সময়মতো দমন করা উচিত।
 

ফল সংগ্রহ : বীজ-চারা রোপণের ১০-১২ বছর পর থেকে গাছে ফুল ফল ধরা আরম্ভ করে। জানুয়ারি মাস হতে শুরু করে মার্চ মাস পর্যন্ত তাল গাছে ফুল ফুটে। তবে বারোমাসি জাতের তাল গাছে সারা বছরই কম-বেশি ফুল ফল ধরে। আগস্ট মাস থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত  পাকা তালের ভরা মৌসুম। মে-জুন মাস কচি তাল পাওয়ার উপযোগী সময়। প্রতিটা গাছে ২০০-৩০০টা কাঁচা পাকা তাল ধরে। সুস্থ সবল গাছে ১০-১৫টা তালের কাঁদি/ছড়া থাকে। তাল পাকা শুরু হলে ৩-৫ সপ্তাহ পর্যন্ত ক্রমন্বয়ে  পাকা ফল পাওয়া যায়। ফল পাকলে মাটিতে ঝরে পড়ে। অনেকে পুষ্ট ফল পেড়ে ২-৫ দিন ঘরে রেখে পাকিয়ে নিয়ে বাজারজাত করে। কিছু চাষি  দড়ি বা লাইলনের  দড়ি দিয়ে জাল  তৈরি করে তা গাছের নিচের কা- ও পাতার ডগায় বেঁধে রাখে। পাকা ফল ঝরে এ জালে জমা হয়। তাতে পরে গাছে উঠে জমায়িত ফল সংগ্রহ করা হয়। এ ব্যবস্থায় তাল ফল পড়ে আঘাতপ্রাপ্ত বা গলে যাওয়া রোধ হয়। এ ব্যবস্থায় ফল সংগ্রহ করা হলে  বাজার মূল্য বেশি পাওয়া যায়। একেকটা কচি তালের মূল্য প্রায় ২০ টাকা। তবে পাকা তাল ফলের আকার অনুযায়ী ৬০-১০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। সে হিসাবে একটা গাছ থেকে ৫-৭ হাজার টাকার কচি তাল অথবা ৮-১০ হাজার টাকার পাকা তাল থেকে আয় হয়। একেকটা পুরুষ/স্ত্রী তাল গাছ থেকে প্রতিদিন ১০-১৫ লিটার রস পাওয়া যায়। মার্চ মাস থেকে জুন মাস পর্যন্ত তালের রস সংগ্রহ করা যায়। মৌসুমে একেকটা তাল গাছ থেকে প্রায় ৭০০-১৫০০ লিটার রস সংগ্রহ করা যায়। প্রতি লিটার রসের বাজার মূল্য প্রায় ২০-৩০ টাকা। সে অনুযায়ী একটা পুরুষ গাছ থেকে ১০-১২ হাজার টাকার রস বিক্রি করা যায়। একটা তাল গাছের রস থেকে প্রায় ৫০-৭০ কেজি  গুড় পাওয়া যায়। সব দিক বিবেচনায় তাল গাছ মানব জীবনে অতি উপকারী বৃক্ষ। এ গাছের বহুল সম্প্রসারণ ও নিধন বন্ধ করে একে রক্ষা করা আমাদের সবারই একান্ত কর্তব্য।

 

এম এনামুল হক*

*মহাপরিচালক (অব.) এবং সদস্য, বিশেষজ্ঞ পুল (APA), কৃষি মন্ত্রণালয়, Email-enamul 1944@gmail.com, মোবাইল : ০১৯১৭০৫৫২০৫


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon